ইতিহাস ও কার্যাবলী
লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম ফ্রিজার ও লন্ডন কোর্ট অফ ডিরেক্টরের উদ্যোগে ১৭৭৫ সালে বৃটিশ সামরিক অশ্বারোহী বাহিনীতে ঘোড়া সরবরাহের উদ্দেশ্যে ভারতে পোষা ঘোড়ার খামার স্থাপিত হয়। প্রকৃতপক্ষে তখন থেকেই এতদঞ্চলে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রাণিসম্পদ সেবার শুরু। এরও প্রায় শতাধিক বছর পরে ১৮৯৩ সালে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ সিভিল ভেটেরিনারি ডিপার্টমেন্ট যাত্রা শুরু করে।
পাক ভারত স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত প্রাণিসম্পদের উৎপাদন সম্পর্কিত 'পশুপালন বিভাগ' কৃষি অধিদপ্তরের সাথে সম্পৃক্ত থেকে পরিচালিত হতো। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পরে উক্ত পশুপালন বিভাগের সদর দপ্তর কুমিল্লা জেলা শহরের ক্ষেত্রী বিল্ডিং এ স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ অক্টোবর ১৯৪৮ ইং তারিখে তৎকালীন পূর্ব পকিস্তানে বেসামরিক পশুপালন বিভাগকে নতুন ভাবে পূনর্গঠন করে বেসামরিক ভেটেরিনারি সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পূনর্গঠিত পশুপালন বিভাগের নামকরণ করা হয় Directorate of Animal Husbandry.
১৯৬০ সালে পশুপালন বিভাগ আবার পূনর্গঠন করে এর সদর দপ্তর কুমিল্লা থেকে ঢাকার নিমতলীস্থ 'সাইন্স ভিলা' তে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় পশুপালন বিভাগের অবকাঠামোগত সংস্কার ও পেশাগত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি ও ভেটেরিনারী সার্ভিসের মান উন্নয়ন এবং লোকবল বৃদ্ধি ইত্যাদি ব্যাপারে সার্বিকভাবে পরিবর্তন আনা হয়। এই পূনর্গঠনের ফলে পশুপালন বিভাগের নতুন নামকরন হয় Directorate of Livestock Services. এ সময়ে নবগঠিত পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে থানা পর্যন্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিভাগীয় ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ১ম শ্রেনীর গেজেটেড পদমর্যাদাসহ পূর্ব পাকিস্তান হায়ার লাইভস্টক সার্ভিসেস (EPHLS) অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্য দিকে জেলা ও সমপর্যায়ে কর্মকর্তাগণ ২য় শ্রেনীর পদমর্যাদায় পূর্ব পাকিস্তান এ্যানিমেল হাজবেন্ড্রী সার্ভিসের (EPLS) অর্ন্তভুক্ত ছিল।
পশুসম্পদ বিভাগের পূণবিন্যাসের ফলে থানাতে ০২ জন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ০১ জন থানা সহকারী পশুপালন কর্মকর্তা যার মুল কাজ ছিল পশুপাখির সার্বিক উন্নয়ন। অন্যজন থানা সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন। তিনি পশুপাখির চিকিৎসা ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকতেন। পরর্বতীকালে ১৯৬৪ সালে সদর দপ্তর ঢাকার নিমতলীস্থ 'সাইন্স ভিলা' হতে সচিবালয়ের অভ্যান্তরে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৬৬ সালর জুন মাসের পূর্বে শুধুমাত্র মহকুমা তদূর্ধ্ব পদগুলোতে সংক্ষিপ্ত তিন মাসের পিজিটি সমাপ্তির উপর পদোন্নতি প্রাপ্ত ডিপ্লোমাধারী এবং ভেটেরিনারি ডিগ্রিধারী কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিধান চালু করা হয়। এই সময়ে মহাকুমা ও থানা পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ সাব অর্ডিনেট লাইভস্টক সার্ভিসের (আপার) অন্তর্গত ছিল। অন্যদিকে ডিপ্লোমাধারী কর্মকর্তাগণ পূর্বের ন্যায় নিম্নতর এ্যনিমেল হাজবেন্ড্রী সার্ভিসের অর্ন্তভুক্ত থাকে। ১৯৬৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে মহকুমা ও থানা পর্যায়ে নিয়োজিত সকল ডিগ্রীধারী কর্মকর্তাদের পদ ২য় শ্রেণীর গেজেটেড পদ মর্যাদায় উন্নীত করা হয়।
বংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সদর দপ্তরটি পুনরায় ১০৫/১০৬ মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকায় এবং তৎপরবর্তীতে আলাউদ্দিন রোডে স্থানান্তারিত হয়। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মহকুমা ও থানা পর্যায় পর্যন্ত নিয়োজিত ডিগ্রীধারী কর্মকর্তাদের পদ ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১ম শ্রেনীর মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়। এতে মহকুমা গুলিকে জেলায় রুপান্তর করা হয়। থানাগুলিকে জন প্রতিনিধির (চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ) অধীনে ন্যাস্ত করা হয়।
ফলশ্রুতিতে অন্যান্য বিভাগের মত তৎকালীন পশুসম্পদ বিভাগের থানা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপজেলা পরিষদে প্রেষণে নিয়োজিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পূনর্বিন্যাস ও সংস্কার কমিটির (এনাম কমিটি) রির্পোটের ভিত্তিতে পশুসম্পদ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক পূনবিন্যাস করা হয় এবং এর ফলে (ক) অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন), (খ) অতিরিক্ত পরিচালক (সম্প্রসারণ), (গ) অতিরিক্ত পরিচালক (উৎপাদন), (ঘ) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা,প্রশিক্ষন ও মূল্যায়ন) পদ সৃষ্টি হয়। এই সময়ে সদর দপ্তরটি সর্বশেষ ১৯৮৪ সাল ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষি খামার সড়কে অধিদপ্তরের জন্য নবনির্মিত নিজস্ব ভবনে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯২-৯৩ সালে জনাব মান্নান কমিটির সুপারিশে পরিচালক পদটি মহাপরিচালক অতিরিক্ত পরিচালকের পদগুলো পরিচালক পদে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৯৫ সালে থানা পর্যায়ের পদ উন্নীত করা, ৪৭ টি উপপরিচালক ও সমপর্যায়ের পদ হতে যথাক্রমে মাত্র ১৩ টি পদকে উন্নীত করা সহ ২০০১ সালে পরস্পর বদলীযোগ্য ১৯১ টি জেলা ও সমপর্যায়ের পদ হতে যথাক্রমে মাত্র ১৯১ টি পদকে উচ্চতর বেতন স্কেলে উন্নীত করা হয়। এভাবে কালের পরিক্রমায় ২০১০ সালে পশুসম্পদ অধিদপ্তর 'প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর' নামে নবযাত্রা করে শুরু করে।